সর্বশেষ আপডেট : ৬ ঘন্টা আগে
বৃহস্পতিবার, ১ জুন ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ | ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

মাত্র ৫ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করে এখন কোটি টাকার ব্যবসার মালিক ইয়াসমিন জামান।

মায়ের ছিল সেলাই মেশিন। সুযোগ পেলেই তাতে বসতেন ইয়াসমিন জামান। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় নিজের পোশাকের নকশা নিজেই করেন। এসএসসি পাসের পর বাবা নুরুজ্জামান মে’য়েকে নারায়ণগঞ্জের বিসিক কুটির শিল্পে ভর্তি করে দেন। কাপড়ে নকশার কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শেখার হাতেখড়ি তখনই।

ইয়াসমিন জামান প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর ব্যবসা শুরু করলেন নগদ পাঁচ হাজার টাকা আর মায়ের পুরোনো সেলাই মেশিনটি নিয়ে। ইয়াসমিন এখন কোটি টাকার ব্যবসা’প্রতিষ্ঠানের মালিক। তাঁর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রায় সাড়ে সাত শ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ইয়াসমিনের ‘ভূমি সুতা’নামক প্রতিষ্ঠান এবার ১৯ বছরে পা দিয়েছে। কারখানার বেতনভুক্ত কর্মী ৩৭ জন। মাঠপর্যায়ে উৎপাদনকর্মী আছেন সাত শর বেশি। তাঁদের বেশির ভাগই নারী। কারখানা কর্তৃপক্ষ নকশাসহ কাজের ধরন বুঝিয়ে দেয়। নারীরা বাড়িতে বসেই কাজ করেন। পরে বাহারি নকশার কাপড় চলে আসে কারখানায়।

নারায়ণগঞ্জের মে’য়ে ইয়াসমিন। শহরের পূর্ব ইসদাইর এলাকায় তাঁর ব্যবসা’প্রতিষ্ঠান। নিজের কার্যালয়ে বসে ইয়াসমিন বললেন, বাহারি নকশার পোশাক পেলে খুঁটিয়ে দেখতেন। এতেই বাবা নুরুজ্জামান বুঝে যান মে’য়ের ভবিষ্যৎ লুকিয়ে আছে এই নকশার ভেতর।।

ঢাকার বিসিকেও বিভিন্ন বিষয়ের ওপর প্রশিক্ষণ নেন ইয়াসমিন। পাশাপাশি চলতে থাকে পড়াশোনা। একাদশ শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে হয় ইয়াসমিনের। বর ব্যবসায়ী মনজুর হোসেন। বিয়ের পরও থেমে যায়নি পড়াশোনা বা সুই-সুতা নিয়ে নকশা-বুননের স্বপ্ন। ইয়াসমিন বিএ পাস করেছেন। স্বামীসহ পরিবারের সবার সহযোগিতায় এগিয়ে নিয়েছেন নিজের স্বপ্নের হস্ত ও কুটির শিল্প।১৯৯৪ সালে ফ্যাশন হাউস ‘রঙ’ দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক কাজের হাতেখড়ি ইয়াসমিনের। প্রতিষ্ঠানটির ফ্যাশন ডিজাইনার ও প্রোডাকশন ডিরেক্টর ছিলেন তিনি। ২০০০ সালে চাকরির পাশাপাশি ঘরোয়া পরিবেশে শুরু করেন ‘ভূমি সুতা’ নামের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম।আস্তে আস্তে প্রতিষ্ঠানের ব্যাপ্তি বাড়তে থাকে। ২০০৬ সালে নিজের কারখানা নির্মাণ করেন। ফ্যাশন ডিজাইনার বিপ্লব সাহার পাশে থেকে প্রতিনিয়ত খুঁটে খুঁটে কাজ শেখেন। প্রবাসফেরত প্রতিবেশী অলিদ (বর্তমানে প্রয়াত) যু’ক্ত হন ভূমি সুতার সঙ্গে। কিছু পুরোনো যন্ত্রপাতি নিয়ে ভূমি সুতার কারখানা যাত্রা শুরু করে। পরে নিজস্ব জায়গায় শেড নির্মাণসহ যন্ত্রপাতি কিনতে খরচ পড়ে ১০ লাখ টাকা। ২০১১ সালে চাকরি ছেড়ে দেন ইয়াসমিন।পাঞ্জাবি, শাড়িসহ দেশীয় নানা ধরনের পোশাকে নকশার কাজ করে ভূমি সুতা। বছরে ৫০ হাজারের বেশি পণ্য তৈরি হয়। ইয়াসমিন বলেন, ‘আগে আমাকে সব বিষয়ে জানতে হবে এবং পারদর্শী হতে হবে। তবেই দল পরিচালনা করা সম্ভব। ব্লক, বাটিক, স্ক্রিন প্রিন্ট, ডাইং (রঙের কাজ), কারচুপি, সেলাই—প্রতিটি বিষয়ে আমি দক্ষতা অর্জন করেছি। যার কারণে আমি কোথাও আ’ট’কাইনি।’ তিনি আরও বলেন, কাপড়ের গুণগত মান, রং—সবকিছু মা’থায় রেখে নকশা করতে হয়। রঙের ক্ষেত্রে রাসায়নিক ও ভেজিটেবল রং—দুটিই ব্যবহার করা হয়।

ভূমি সুতা এখন খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা করছে। দেশের নামকরা বড় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের গ্রাহক। ভূমি সুতার তৈরি পণ্য চট্টগ্রাম, সিলেট, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে যাচ্ছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানের কারখানা থেকেও পণ্য বিক্রি করা হয়। অনলাইনেও প্রচুর চাহিদা আসছে। নৌবাহিনীর জন্য ট্রাউজার, জ্যাকেট, ক্যাপসহ বিভিন্ন পণ্যের কাজ করছে ভূমি সুতা। সরকারকে নিয়মিত কর দেন ইয়াসমিন জামা।।
ইয়াসমিন জানালেন, ব্যাকরণ মেনে নকশা করেন না। তাই তাঁর নকশায় বৈচিত্র্য থাকে। আর কাপড়ে রঙের স্থায়িত্ব নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতে পারে না। পোশাকের রং টেকসই করার ব্যাপারে কোনো ধরনের ছাড় দেয় না তাঁর প্রতিষ্ঠান।

ইয়াসমিন বললেন, বিদেশি পণ্যের পেছনে না ছুটে দেশি পণ্যের প্রতি আগ্রহ বাড়ালে দেশীয় শিল্প বাড়বে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন ইয়াসমিন। তরুণদেরও এ বিষয় মা’থায় রাখার পরাম’র্শ দিলেন। নারীরা বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে উদ্যোক্তা হচ্ছেন। ব্যাংকে নারী উদ্যোক্তাদের সুদের হার কমিয়ে আনা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য এ উদ্যোক্তার।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: