সর্বশেষ আপডেট : ১০ ঘন্টা আগে
বুধবার, ৭ জুন ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ | ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

নিশ্চিত ছিলাম যে পানিতে ডুবে মারা যাব: অভিবাসনপ্রত্যাশীর অভিজ্ঞতা

ঝুঁ’কিপূর্ণভাবে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যু’ক্তরাজ্যে প্রবেশ করা অ’ভিবাসনপ্রত্যাশী জানাচ্ছেন তার দুর্গম যাত্রার অ’ভিজ্ঞতা। ইনফোমাইগ্রেন্টস তুলে ধরছে কী’ভাবে তিনি মৃ’ত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছেন৷

আরো বাইশজনের সাথে গাদাগাদি করে একটি ছোট ডিঙি নৌকায় বসা আবদুল্লাহ আল বাদরি ভাবেন যে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যু’ক্তরাজ্যে প্রবেশ করা হয়ে উঠবে না তার। ২৭ বছর বয়েসি আবদুল্লাহ’র দৃঢ় বিশ্বা’স ছিল, যে তিনি সাগরেই মা’রা যাবেন।

কুয়েতের বেদুইন গোষ্ঠীর আবদুল্লাহ গত চার বছর ধরে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ইউরোপে হণ্যে হয়ে ঘুরছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, “এই জীবন অসহ্য। মা’রা যাবার একটা পন্থা ছিল এটা।” ফ্রান্সের ঠিক কোন জায়গা থেকে যু’ক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে আবদুল্লাহর যাত্রা শুরু হয়, তা মনে নেই তার। তবে সে জানে, সেই জায়গায় ঘন জঙ্গল ছিল।

২০১২ সালে তুরস্কের একটি সৈকতে পড়ে থাকা আয়লান কুর্দির প্রসঙ্গ তুলে আবদুল্লাহ বলে, “এই নৌকায় যাওয়াটা কোনো সহ’জ বিষয় ছিল না। আমি নিজেকে জিজ্ঞেস করছিলাম যে কী’ হবে আমা’র সাথে? আমিও কি সিরিয়ার ওই শি’শুর মতো ম’রে পড়ে থাকব?”

আবদুল্লাহ যে নৌকায় ছিল, তার দৈর্ঘ্য ছয় মিটার বা বিশ ফুটের কাছাকাছি। বিশ্বের অন্যতম ব্যস্ত সাগরপথে বড় জাহাজের ঢেউয়ের ধাক্কায় ও বাজে আবহাওয়ার কারণে দুলছিল সেই নৌকা। আবদুল্লাহ বলেন, “তারপর নৌকা থেকে সাগরে পড়ে যায় একজন। আম’রা তাকে টেনে তুলি। সবাই খুব ভ’য় পেয়ে গিয়েছিল।”

নৌকাটি দিক হারিয়ে ফেললে দশ ঘণ্টা কে’টে যায়। এরপর আবদুল্লাহ জরুরি পরিষেবার নম্বরে যোগাযোগ করেন, যারা এসে তাদেরকে ডোভা’র বন্দরে নিয়ে যায়।

ম’র্যাদার খোঁজে দেশছাড়া

আবদুল্লাহ জানান, কুয়েতে পরিবারের সকলকে ছেড়ে মধ্যপ্রাচ্যের অ’ভিবাসনপ্রত্যাশীদের সাথে চলে যাওয়া তার পক্ষে খুবই ক’ষ্ট’কর ছিল। ইউরোপে নতুন জীবনের খোঁজ এতটা সহ’জ ছিল না তার।

“আমি বেদুইন। আমি দেশ ছেড়েছি কারণ দেশে আমাদের কোনো ম’র্যাদা নেই, আমাদের স্বাধীনতা নেই, নেই দেশে নির্বাচনে অংশ নেবার ক্ষমতাও”, বলেন আবদুল্লাহ। তিনি জানান, জন্ম থেকেই তার কোনো নাগরিকত্ব নেই। ফলে, স্বাস্থ্য পরিষেবা, ব্যাংক সুবিধাসহ সব নাগরিক সুবিধা থেকে সে বঞ্চিত। এবিষয়ে কুয়েতের সরকারের তরফ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

১৯৬১ সালে যখন কুয়েত স্বাধীন হয়, তখন থেকেই নাগরিকত্ব পায়নি বেদুইন গোষ্ঠীর মানুষেরা। কুয়েতসহ কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্যের দেশে রাষ্ট্রহীন মানুষদের ‘অ’বৈধ বাসিন্দা’ বলা হয়। একই বিভাগে ফেলা হয় সেইসব অ’ভিবাসনপ্রত্যাশীদের, যাদের কাছে পরিচয়ের কোনো নথি নেই।

নাগরিকত্ব নেই তাই ভু’য়া নথির ভরসায়

পাসপোর্ট না থাকায় আবদুল্লাহর পরিবার তার জন্য ২০১৭ সালে নয় হাজার কুয়েতি দিনারের ব্যবস্থা করে, যা ২০ হাজার মা’র্কিন ডলার বা সতেরো লাখ বাংলাদেশি টাকার সমান। এই টাকা অ’ভিবাসী পাচার চক্রের সাথে যু’ক্তদের দেয় আবদুল্লাহ। এভাবেই নকল পাসপোর্ট ও নথির সাহায্যে পরের চার বছরের অ’ভিবাসন যাত্রার শুরু। প্রথম ধাপে, বিমানে চেপে তুরস্কে পাড়ি দেয় আবদুল্লাহ।

এরপর গ্রিস হয়ে বেলজিয়ামে পৌঁছে দু’বছর থাকেন তিনি, কিন্তু সেখানে তার আশ্রয়ের আবেদন খারিজ হয়ে যায়। তারপর সুইজারল্যান্ড হয়ে ফ্রান্সে এসে পৌঁছান তিনি । সেখান থেকেই যু’ক্তরাজ্যে প্রবেশের স্বপ্ন দেখে আবদুল্লাহ।

বর্তমানে, আব্দুল্লাহ যু’ক্তরাজ্যে তার আশ্রয় আবেদনের ফলাফল জানার অ’পেক্ষায়। এখানেও আবেদন খারিজ হলে দেশে ফেরত পাঠানো হবে তাকে।

যু’ক্তরাজ্যে অ’ভিবাসনের বাস্তবতা

ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ দেশটিকে আশ্রয়প্রার্থীদের কাছে অনাকর্ষণীয় করে তুলতে চায়। একটি প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, অ’বৈধভাবে যু’ক্তরাজ্যে ঢুকতে চাইলে চার বছর পর্যন্ত কারাবাসের সাজা হতে পারে।

এই প্রস্তাবিত আইন বিষয়ে আবদুল্লাহর কোনো ধারণা নেই৷ চলতি বছর তার মতো আরো কয়েক হাজার অ’ভিবাসনপ্রত্যাশী ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে আশ্রয়ের আশায় যু’ক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছে।

জুলাই মাসে ফরাসি ও ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করে যে, ইংলিশ চ্যানেলের দুর্গম ও ঝুঁ’কিপূর্ণ এই পথে নৌকার ওপর নজরদারি বাড়াবে তারা। যু’ক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র বিভাগের মতে, বুধবার এক দিনে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যু’ক্তরাজ্যে এসে পৌঁছেছেন ৪৮২ অ’ভিবাসনপ্রত্যাশী, যা একদিনে এবছরের সর্বোচ্চ সংখ্যা।

কিন্তু আরেক অ’ভিবাসনপ্রত্যাশী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, এই নতুন আইনের প্রস্তাব স’ম্পর্কে সে অবগত ছিল। ই’রাকে তার পরিবারের ওপর বিপদ আসতে পারে ভেবে নিজের পরিচয় প্রকাশ করেনি সে। নিজের সমকা’মী পরিচয়ের কারণে নিজের দেশে বিদ্বেষ ও অ’ত্যাচারের শিকার হয় সেই ব্যক্তি।

রয়টার্সকে তিনি বলেন, “আমি সমকা’মী হবার কারণে আমাকে তিনবার কারাবাসে পাঠানো হয়।”

তিনি আরো জানান, একবার এক পু’লিশকর্মীর হাতেই নিগৃহীত হতে হয়েছে তাকে। ‘‘আমাকে পু’লিশকর্মীটি বলে যে, তারা আমা’র পরিবারকে বলে দেবে যে আমি সমকা’মী।’’

‘‘এই কথা জানলে আমা’র পরিবারই আমাকে মে’রে ফেলবে। যেহেতু আমা’র দেশ ই’রাক ও মধ্যপ্রাচ্যে, আমাদের ধ’র্মে এই সংক্রান্ত কিছু সমস্যা রয়েছে, ফলে কেউ আমা’র এই জীবন মেনে নিতে পারেনা৷’’

যদিও ই’রাক সরকার বলছে, তারা সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষায় সচেষ্ট তবে দেশটির তথাকথিত রক্ষণশীল সামজ ব্যবস্থায় এখনো স্বীকৃতি পায়নি সমকা’ম।

৩২ বছর বয়েসি এই ই’রাকি নাগরিক জানান, ই’রাকে নিরাপদ বোধ করেনি বলেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে তিনি। তারপর জার্মানিতে দু’বছর থাকলেও সেখানে শরণার্থীর ম’র্যাদা না পাওয়ায় ফ্রান্স হয়ে যু’ক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন তিনি৷

বর্তমানে যু’ক্তরাজ্যের লিডস শহরে বাস করা এই ই’রাকি যুবকও নিজের আবেদনের ফলাফল জানার অ’পেক্ষায়। ভাষাজ্ঞান উন্নত করে ভবিষ্যতে দোভাষীর কাজ করবার স্বপ্ন তার।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

এ বিভাগের অন্যান্য খবর

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: