ক্রীড়া প্রতিবেদক ::
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছে আরও চার বছর আগে। টি-টোয়েন্টি, টেস্ট অনুষ্ঠিত হলেও এই স্টেডিয়ামের ভাগ্যে এতদিন ওয়ানডে ছিল না। অবশেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের মধ্য দিয়ে ওয়ানডেতেও অভিষেক হয়ে গেলো স্টেডিয়ামটির। সেই অভিষেকেই ঐতিহাসিক জয় ধরা দিলো বাংলাদেশের হাতে। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সিরিজের শেষ ম্যাচে ৮ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে সিরিজটাও ২-১ ব্যবধানে জিতে নিলো টাইগাররা।
শুক্রবার (১৪ ডিসেম্বর) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের কাছে ৮ উইকেটে হেরেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টসে জিতে বলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন টাইগার অধিনাক মাশরাফি বিন মর্তুজা। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভার খেলে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৯৮ রান সংগ্রহ করে সফরকারীরা। জবাবে বাংলাদেশ ৩৮.৩ বল খেলে ২০২ রানে কাঙ্খিত জয় অর্জন করে। এক্ষেত্রে টাইগারদে বিসর্জন দিতে হয় ২টি উইকেট। তামিম-সৌম্যের ব্যাটিং নৈপুণ্যে অর্জিত বাংলাদেশের জয় দেখেছে সিলেটের ক্রীড়ামোদি দর্শকরা।
জয়ের জন্য ১৯৯ রানের টার্গেটে মাঠে খেলতে নামেন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস। দলীয় ৪৫ রানের মাথায় বাংলাদেশের প্রথম ইউকেটের পতন হয়। ৩৩ বলে ২৩ রান করে তামিমের সঙ্গ ছাড়েন লিটন। এ সময় ব্যাট হাতে মাঠে প্রবেশ করেন সৌম্য সরকার। ৬২ বলে হাফ সেঞ্চুরি করে নিজের অনবদ্য ইনিংস খেলতে থাকেন তিনি। অবশ্য এর আগেই তামিমের ব্যক্তিগত রান হাফ সেঞ্চুরির সীমানা পাড়ি দেয়। ৩০.৪ ওভারে সৌম্যের প্রথম ছক্কাটি এবং পরের বলে দ্বিতীয় ছক্কাটি সিলেটের হাজার হাজার দর্শককে আনন্দের সাগরে ভাসিয়ে দেয়। সেই সুবাদে তামিম-সৌম্য ১০০ রানের জুটি গড়েন। দলীয় রান তখন ১৮৮ বলে ১৫০ রান।
৩৩.৪ ওভারে সৌম্য সরকারের ছক্কার আনন্দকে বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছের পরপর দুটি চারের মার। দলীয় ১৭৬ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ৮০ রানের সংগ্রহ নিয়ে কিমো পলের বলে বোল্ড হয়ে মাঠ ছাড়েন কৃতী এই ক্রিকেটার। দলীয় রানের খাতায় ১৩১ রান যোগ করেন তামিম-সৌম্য জুটি। সৌম্যের ৮০তে ছিল পাঁচটি চার ও পাঁচটি ছক্কার মার।
এরপর মুশফিকুর রহিমকে সঙ্গে নিয়ে ১০৪ বল খেলে ৯টি চারের মারে ৮১ রান করে অপরাজিত থাকেন তামিম ইকবাল। মুশফিক অপরাজিত থাকেন ১৬ রান নিয়ে।
এর আগে শুরুতে ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে ১৯৮ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ওপেনার শাই হোপ ৯টি চার ও ১টি ছক্কার মারে ১৩১ বল খেলে ১০৮ রানে অপরাজিত থাকলেও বাকীদের মধ্যে শুরু হয় আসা যাওয়ার পালা। সেই আসা যাওয়ার মিছিলে শামিল হন ৮ ব্যাটসম্যান। যার মধ্যে মারলন স্যামুয়েলসের ১৯ রানই সেরা সংগ্রহ। দেবেন্দ্র বিষু অপরাজিত থাকেন ৬ রান করে।
মাত্র ২৯ রান দিয়ে চারটি উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হন বাংলাদেশের অলরাউন্ডার মেহেদি হাসান মিরাজ। ওয়ানডেতে তার ক্যারিয়ারে এটিই সেরা বোলিং। এছাড়া সাকিব ও মাশরাফি দুটি করে উইকেট নেন। আর বাকি এক উইকেট নেন সাইফ উদ্দিন। টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করে সিরিজ সেরা হয়েছেন ক্যারিবীয় ওপেনার শাই হোপ।
এই জয়ের মধ্য দিয়ে এক বছরে সবচেয়ে বেশি (২০টি) ওয়ানডে জয়ের রেকর্ড গড়ল টাইগাররা। চলতি বছরে এনিয়ে ৪১টি ম্যাচ খেলে ২০টিতে জয় পায় বাংলাদেশ। এর আগে ২০০৬ সালে ৩৩ ম্যাচে ১৯টিতে জয় পেয়েছিল টাইগাররা।
সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে দুটি পরিবর্তন আসে বাংলাদেশের। ইমরুল কায়েসের বদলে এই ম্যাচে জায়গা পান মোহাম্মদ মিঠুন। আর রুবেল হোসেনের জায়গায় সুযোগ পান সাইফ উদ্দিন। উইন্ডিজ দলে আসে একটি পরিবর্তন। ওশান থমাসের জায়গায় সুযোগ পান ফ্যাবিয়ান অ্যালেন। এই ম্যাচে জয় নিয়ে টানা তৃতীয় সিরিজ জিতলো মাশরাফি-মুশফিক-মাহমুদুল্লাহ’রা। এই ম্যাচ দিয়েই সিলেটের মাঠে আন্তর্জাতিক ওয়ানডের অভিষেক হয়।
বাংলাদেশ একাদশ: মাশরাফি বিন মর্তুজা (অধিনায়ক), তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, লিটন দাস, সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ মিঠুন, মুশফিকুর রহিম (উইকেটরক্ষক), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন, মেহেদী হাসান মিরাজ এবং মোস্তাফিজুর রহমান।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ: রোভম্যান পাওয়েল (অধিনায়ক), চন্দরপল হেমরাজ, শাই হোপ (উইকেটরক্ষক), ড্যারেন ব্রাভো, মারলন স্যামুয়েলস, শিমরন হেটমেয়ার, রোস্টন চেজ, দেবেন্দ্র বিশু, কেমার রোচ, কেমো পল এবং ফ্যাবিয়ান অ্যালেন।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন