cialis fiyat cialis sipariş http://umraniyetip.org/
Fapperman.com DoEscortscialis viagra viagra cialis cialis viagra
সোহরাব শান্ত ::
কালীকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য শাহ আবদুল করিমকে প্রশ্ন করলেন, ‘‘আচ্ছা, আপনি লোকসঙ্গীত গান, পটল বাবুও লোকসংগীত করেন। আপনাদের দু’জনের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?’’
শাহ করিম স্বাভাবিক ভঙ্গিতে সিলেটি উচ্চারণে কালীকাপ্রসাদকে বললেন, ‘‘তুমিও তো বা লোকসঙ্গীত গাও। আমি, তুমি আর পটল বাবুর মইধ্যে পার্তক্য কিতা!’
কালীকাপ্রসাদ বললেন, ‘‘আমি তো নগণ্য গায়ক। আপনি আর পটল বাবুর সঙ্গে আমার নাম উচ্চারিত হওয়ার মতো নয়।’’
শাহ করিম কালীকাপ্রসাদের উত্তরে সন্তুষ্ট হয়ে বললেন, ‘‘হুনো মিয়া। ধরো তুমি কোনোখানো গান গাইতায় গেলায়, যেখানো এক হাজার দর্শক বওয়ার জাগা আছে। তুমি দেখলায় মাত্র তিনজন দর্শক। এই পরিবেশ গান গাইতায় ফারবায় নি?’’
‘‘আমি পারব না।’’ উত্তর দিলেন কালীকাপ্রসাদ।
শাহ আবদুল করিম তখন বললেন, ‘‘আমি করিম কইলাম ওউ তিনজন দর্শকের সামনেই গান গাইমু। কারণ আমি গান গাই মাইনষেরে কিছু বার্তা দেওয়ার লাগি। আমি বাউলের তত্ত্ব প্রচার করি।’’
প্রসঙ্গত , অকাল প্রয়াত কালীকাপ্রসাদ ভট্টাচার্য নিজেও বড় মাপের লোকসংগীত শিল্পী ছিলেন। ১৯৯৯ সালে, তিনি উত্তরবঙ্গ এবং পূর্ববঙ্গের পল্লীগান ও লোকায়ত গানের ঐতিহ্যকে পুনর্জাগরণের উদ্দেশ্যে লোকগানের ব্যান্ড দোহার সহপ্রতিষ্ঠা করেন।
শাহ আবদুল করিম তো ‘মহিরূহ’, তাঁকে বলা হয়ে থাকে ‘বাউল সম্রাট’। আর ‘পটল বাবু’ খ্যাত শক্তিমান সুরকারের আসল নাম বিদিত লাল দাস। তিনি ‘সাধের লাউ বানাইলো মোরে বৈরাগী’, ‘‘মরিলে কান্দিস না আমার দায়’, ‘কারে দেখাবো মনের দুঃখ গো’, ‘বিনোদিনী গো তোর বৃন্দাবন কারে দিয়ে যাবি’ এমন বহু জনপ্রিয় গানের সুরস্রষ্টা।
শাহ আবদুল করিমের লেখা ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ গানটি বিদিত লালের করা সুরেই বর্তমানে অধিক জনপ্রিয়। বাউলরা শাহ আবদুল করিমের নিজের করা সুরেও গায়। বাউল আবদুল করিম নিজেও বিদিত লালের করা সুরে এক অনুষ্ঠানে ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ গানটি গেয়েছিলেন।
আপনি-আমি হয়তো সামান্য বাধায় যেকোনো ভাল কাজ থেকে পিছিয়ে আসি। কিন্তু শাহ আবদুল করিমদের মতো বড় মাপের মানুষরা যেকোনা পরিস্থিতে নিজের কথাটি বলে যান। বলেন প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহ, মাস বছরে। ফলে বাউলের নিজস্ব মতবাদের বাইরে শাহ আবদুল করিমরা হতে পারেন রাজনীতি সচেতন, সমাজ সংস্কারক।
আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, যে শাহ করিম দেহতত্ত্ব ও বাউলতত্ত্ব গান লিখেছেন, তিনিই ৫২’র ভাষা আন্দোলনে লিখেছেন, ‘আমি বাংলা মায়ের ছেলে/ জীবন আমার ধন্য যে হায়, জন্ম বাংলা মায়ের কোলে..।’ ভাষা আন্দোলনে যুক্ত হয়ে জেল খেটেছেন।
শাহ করিম ৫৪’র নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের পক্ষে গান করেছেন, মওলানা ভাসানী আর বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে। এর আগে আসামে মওলানা ভাসানীর সম্মেলনে গান করে মওলানার দোয়া পেয়েছেন। শাহ আবদুল করিম পরে ৭০’র নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে থেকে ভাটি অঞ্চলে আওয়ামী লীগের জনভাগুলোতে গান গেয়ে বেড়িয়েছেন।
সমাজ সংস্কারেও শাহ করিমের অনেক বড় ভূমিকা আছে। তাঁর একটা গান শহুরে মানুষ হয়তো শুনেন নি। যৌতুকের অনাচার নিয়ে তাঁর লেখা গান, ‘বড় ভাবি গো ভাবি, আমারে ঠেকাইছুইন আল্লায়/ আমি খালি চিন্তা করি, আমার কুন্তা করবার নাই..’ শুনলে আমার মন কেঁদে ওঠে। যৌতুকের কারণে বিয়ে না হওয়া এক গ্রাম্য যুবতির মনের কষ্টের কথা এই গানে ফুটে উঠেছে।
গানটির পরের চরনে আছে- ‘এই দিগেও তিনচার খানে বাবাজান গেলায়/ কম দামে নি দামান মিলবে, খুঁজিয়া চাইলা/ ছনের ঘরে থাকে জামাই, তবুও টেলিভিশন চায়।’ কয়েক দশক আগেও অভাবগ্রস্থ গ্রামীণ সমাজে যৌতুক ছিল এক বড় অনাচারের নাম। যারা বিষয়টি জানেন, তারাই বুঝতে পারবেন এই গানের মর্মকথা।
শাহ আবুদল করিমের ‘আগে কী সুন্দর দিন কাটাইতাম’ গানটি তো এখন যেকোনো লোকজ উৎসবের প্রায় আবশ্যিক গান হয়ে উঠেছে।
এত কথা বলার কারণ হচ্ছে, জীবনে যেকোনো লক্ষ্যে পৌঁছুতে হলে ধৈর্য্য, অধ্যবসায় আর পরিশ্রম জরুরী। নিজের ‘সত্য-সুন্দর’ কথাটি সবসময় বলে যেতে হবে। বারবার বলতে হবে। তবেই সমাজে সত্য ও সুন্দর প্রতিষ্ঠিত হবে।
সোহরাব শান্ত : লেখক ও সাংবাদিক