সর্বশেষ আপডেট : ১০ ঘন্টা আগে
শুক্রবার, ৩১ মার্চ ২০২৩ খ্রীষ্টাব্দ | ১৭ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ |

DAILYSYLHET
Fapperman.com DoEscorts

কৃষ্ণচূড়ার রঙে প্রকৃতিতে লেগেছে আগুন

তোফায়েল পাপ্পু, শ্রীমঙ্গল:: গ্রীষ্মের কাঠফাঁটা রোদ্দুরকে সহনীয় করতে কৃষ্ণচূড়ার বর্ণিল রূপে সেজে উঠেছে প্রকৃতি। দেখলেই মনে হয় কৃষ্ণচূড়ার রঙের আগুন জ্বলছে প্রকৃতিতে। এককথায় বলতে গেলে প্রকৃতিতে যেন আগুন লেগেছে কৃষ্ণচূড়ার।

ফুল ফোটার ঋতুর কথা উঠলেই প্রথমেই আসে ঋতুরাজ বসন্তের কথা। ফুল ও প্রকৃতিপ্রেমি মানুষের কাছে এটাই বাস্তবতা। কিন্তু কৃষ্ণচূড়ার চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য্য যেন হার মানায় ঋতুরাজকেও। আর কৃষ্ণচূড়া গ্রীষ্মকে দিয়েছে অন্য এক মাত্রা। ঋতুচক্রের আবর্তনে কৃষ্ণচূড়া তার মোহনীয় সৌন্দর্য্য নিয়ে আবারো হাজির হয়েছে প্রকৃতিতে।
কৃষ্ণচুড়া নিয়ে কবির ভাষায়-
চৈত্রে হয়তো ফোটেনি কৃষ্ণচুড়া
তাতে ক্ষতি নেই; তোমার ঠোঁটেই দেখি
এসেছে আবার কৃষ্ণচুড়ার ঋতু
তুমি আছে তাই অভাব বুঝিনি তার;
না হলে চৈত্রে কোথায়ইবা পাবো বলো
কৃষ্ণচুড়ার অযাচিত উপহার,

সারা দেশের মতো মৌলভীবাজার জেলার শ্রীঙ্গলেও প্রকৃতিতেও এখন কৃষ্ণচূড়ার সুদিন বইছে। এ সুদিনের সুবাতাস ছুঁয়ে যাচ্ছে ফুল ও প্রকৃতিপ্রেমি মানুষের হৃদয়। পাখির ডানায়, হাওয়ায়-হাওয়ায় উড়ছে তার লাবণ্য। গাছে গাছে রক্তিম আভা নিয়ে জেগে থাকা কৃষ্ণচূড়া দৃষ্টি কাড়ছে সেইসব ফুলপ্রেমি মানুষদের, যারা শত ব্যস্ততার মধ্যেও ফুলের জন্য অপেক্ষা করেন। আর কৃষ্ণচূড়ার জন্য প্রহর গোনেন।

শ্রীমঙ্গল উপজেলার বিভিন্ন এলাকার বেশ কয়েকজন ফুল ও প্রকৃতিপ্রেমি মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যারা ফুলপ্রেমি মানুষ, তাদের কাছে কৃষ্ণচূড়া একটি জনপ্রিয় ফুল। নানা বৈশিষ্ট্যে দৃষ্টিনন্দন এ ফুলের কদর রয়েছে সব মহলেই। বিশেষ করে বাংলা কাব্য, সাহিত্য, সংগীত ও বিভিন্ন উপমায় কৃষ্ণচূড়া ফুলের কথা ব্যাপকভাবে উঠে এসেছে। ফুলটির রং এত তীব্র যে অনেক দূর থেকেই চোখে পড়ে। হঠাৎ দূর থেকে দেখলে মনে হবে, কৃষ্ণচুড়া গাছে যেন রঙের আগুন লেগেছে।

স্বাধীনতার রূপক ও চেতনার অর্থে ফুলটিকে ব্যবহার করেছেন অনেক কবি, সাহিত্যিক। শুধু কবি নয়, শ্রীমঙ্গলের পথচারী থেকে শুরু করে সব শ্রেণি পেশার ফুলপ্রেমিদের আনন্দ ও মন কেড়েছে গ্রীষ্মের রাজা কৃষ্ণচূড়া।

উপজেলার ভূনবীর গ্রাম, সিন্দুরখান, সাতগাঁও, কালাপুর, হুগলিয়াসহ বেশ কয়েকটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিটি উপজেলার কোথাও না কোথাও দেখা মিলছে কৃষ্ণচূড়ার। এছাড়াও শ্রীমঙ্গল শহরের পাড়া-মহল্লায়ও ফুলটি সগর্বে জেগে রয়েছে।

এ ছাড়া উপজেলার প্রতিটি উপজেলায় ইট-পাথরের মাঝেও গ্রীষ্মের চোখ জুড়ানো কৃষ্ণচূড়া ফুল বাঙালির মনকে নাড়া দেয় গভীরভাবে। আর গ্রামে-গঞ্জে গেলেও কিছুক্ষণ পর পর দেখা মিলবে গ্রীষ্মের এ রাজার।

সাধারণত বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ এ দুই মাস নিয়েই গ্রীষ্মকাল। আর গ্রীষ্মের ফুলের কথা বলতেই সবার চোখের সামনে ভেসে ওঠে কৃষ্ণচূড়ার কথা। সুমিষ্ট রসাল ফলের জন্য গ্রীষ্মকাল এগিয়ে রয়েছে, তবে ফুলের দিক থেকেও অন্যসব ঋতুর তুলনায় এগিয়ে রয়েছে গ্রীষ্মকাল। তাই ফুল উৎসবের ঋতু বলা যায় গ্রীষ্মকালকেই। এ মৌসুমে কৃষ্ণচূড়ার লাল রঙের যে উম্মাদনা, তা এতই আবেদনময়ী যে চোখ ফেরানো অসম্ভব। কৃষ্ণচূড়ার ঐশ্বর্য, তার রঙের উজ্জ্বলতা অন্য ফুলকেও যেন হার মানিয়েছে। কৃষ্ণচূড়া যে কাউকে দিয়ে যাচ্ছে অন্যরকম এক ভালোলাগা।

ফুল ও প্রকৃতিপ্রেমিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রীষ্মের শুরু থেকেই কৃষ্ণচূড়া ফুলটি প্রকৃতিতে নেমে আসতে শুরু করে। দূর থেকে কৃষ্ণচূড়া দেখলে শুধু মানুষের নয়, পাখিদেরও যেন মন ভরে ওঠে। তাই নানা জাতের পাখির আনাগোনাও থাকে গাছটিকে ঘিরে। বিশেষ করে জাতীয় পাখি দোয়েল, টুনটুনি, চড়–ই, বুলবুল পাখির সরব উপস্থিতি থাকে সারা বেলা। শরীরে রক্তিম আভা মেখে কৃষ্ণচূড়া যেন সারাক্ষণ সবুজ বনভূমি, তৃণভূমিকে আলোকিত করে রেখেছে।

রঙে, রূপে, উজ্জ্বলতা ও কমনীয়তায় কোনো কিছুই যেন কৃষ্ণচূড়ার সমকক্ষ নয়। কৃষ্ণচূড়ার সৌন্দর্যে একবারের জন্য হলেও দৃষ্টি আটকে যায় না কিংবা থমকে দাঁড়ায় না- এমনটা হতেই পারে না।

কৃষ্ণচূড়ার বৈজ্ঞানিক নাম ডেলোনিখ রেজিয়া। এটি ফাবাসিয়ি পরিবারের অন্তর্গত একটি বৃক্ষ যার গুলমোহর নামেও পরিচিতি রয়েছে। বসন্তের শেষ দিকে সাধারণত কৃষ্ণচূড়ার পাতা ঝরে পড়তে শুরু করে। ধীরে ধীরে পত্রহীন বাকানো ডালগুলোতে দেখা যায় কলির আভাস। অন্যান্য ফুল গাছে যখন নতুন পাতা আসে কিন্তু ফুল আসে না, ঠিক তখনই কৃষ্ণচূড়ার সব পাতা ঝরে গিয়ে ফুলের কলি দেখা দেয়। আর গ্রীষ্মের শুরুতেই দেখা যায় লালের আভাস। তারপর লালে লালে উজ্জ্বল হয়ে প্রতৃতিতে যেন আগুন লাগিয়ে দেয় কৃষ্ণচুড়া।

উপজেলার সাতগাঁও জামসী এলাকার বাসিন্দা মো: দুলাল মিয়া একজন ফুলপ্রেমি মানুষ। তিনি জানান, যখন কৃষ্ণচূড়া ফৌটে তখন গাছ-গাছালি লাল-সবুজ রঙে যেন মুখর হয়ে উঠে। আর এ সময়টা আমার কাছে ভালো লাগে অন্যরকমভাবে। এ ভালো লাগার কথা মুখে বলে প্রকাশ করা যাবে না।

শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী শারমিন আক্তার বলেন, “গ্রীষ্মের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কৃষ্ণচূড়ার রঙে রঙিন হয়ে ওঠে প্রকৃতি। বাতাসে বাতাসে কৃষ্ণচূড়ার ফুলগুলো দুলতে থাকে। এ এক অন্যরকম ভালো লাগা। যা ভাষায় প্রকাশ করে আমার পক্ষে বোঝানো সম্ভব নয়।”

সংবাদটি শেয়ার করুন

Comments are closed.

নোটিশ : ডেইলি সিলেটে প্রকাশিত/প্রচারিত সংবাদ, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও বিনা অনুমতিতে ব্যবহার করা বেআইনি -সম্পাদক

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত

২০১১-২০১৭

সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি: মকিস মনসুর আহমদ
সম্পাদক ও প্রকাশক: খন্দকার আব্দুর রহিম, নির্বাহী সম্পাদক: মারুফ হাসান
অফিস: ৯/আই, ব্লু ওয়াটার শপিং সিটি, ৯ম তলা, জিন্দাবাজার, সিলেট।
ফোন: ০৮২১-৭২৬৫২৭, মোবাইল: ০১৭১৭৬৮১২১৪
ই-মেইল: dailysylhet@gmail.com

Developed by: