আন্তর্জাতিক ডেস্ক::
মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানে নিহত ১০ রোহিঙ্গা নিরাপরাধ বেসামরিক ছিলেন বলে জানিয়েছে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)। শনিবার এক টুইট বার্তায় এ কথা জানানো হয়।
বলা হয়, ইন দিন গ্রামের একটি গণকবরে যে দশ নিষ্পাপ রোহিঙ্গা সিভিলিয়ানের মৃতদেহ পাওয়া গেছে তারা আরসার সদস্য ছিলেন না বা আরসার সঙ্গে তাদের কোনো সংশ্লিষ্টতাও ছিল না।
গত বুধবার দেশটির সেনাপ্রধানের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক বিবৃতিতে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ওই ১০ জনকে হত্যা করেছে বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এ ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি তাদের এই স্বীকারোক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে, বার্মিজ সন্ত্রাসী আর্মির যুদ্ধাপরাধের এই স্বীকারোক্তিকে আমরা আন্তরিকভাবে স্বাগত জানাচ্ছি।
গত ১৮ ডিসেম্বর রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতভি থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তরে উপকূলীয় ওই গ্রামে গণকবরে ১০ জনের মৃতদেহ পাওয়ার কথা জানায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী। মিয়ানমার সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করলেও তাদের ‘বাঙালি সন্ত্রাসী হিসেবে’ বর্ণনা করেছিল।
তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, গত ১ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ওই এলাকায় অভিযানে গেলে ‘২০০ বাঙালি সন্ত্রাসী লাঠি ও তরবারি নিয়ে হামলা চালায়’। এ সময় নিরাপত্তা বাহিনীর সদ্যরা ফাঁকা গুলি ছুড়লে অন্যরা পালিয়ে গেলেও ১০ জন ধরা পড়ে।
এই ১০ রোহিঙ্গা হত্যাকাণ্ডে স্থানীয় বৌদ্ধ রাখাইনদেরও দায়ী করা হয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর তদন্তে। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়, ইন দিন গ্রামের মং নি নামের একজনকে হত্যার প্রতিবাদে ওই ১০ জনকে মেরে ফেলতে চেয়েছিল কিছু গ্রামবাসী। তারা আটকদের গ্রামের এক পাশে একটি গণকবরে ঢুকিয়ে ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। তারপর নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের গুলি করে মেরে ফেলে। আইন লঙ্ঘনে ওই সব গ্রামবাসী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জ তাই বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর হামলার ক্ষেত্রে মাঝে মাঝে ‘সন্ত্রাসী ও গ্রামবাসী এক হয়ে যায়’।
গত ২৪ আগস্ট রাতে একযোগে মিয়ানমার পুলিশের ৩০ তল্লাশি চৌকি ও একটি সেনা ঘাঁটিতে হামলার পর রাখাইনে ব্যাপক অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। সেখানে হাজার হাজার মানুষকে হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মুখে ঘর-বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে আসতে শুরু করেন রোহিঙ্গারা। চার মাসে সাড়ে ছয় লাখের বেশি মানুষ বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। এই অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে বর্ণনা করে আসছে জাতিসংঘ।